Quantcast
Channel: বিজ্ঞান – Bigyan
Viewing all articles
Browse latest Browse all 305

বাঁদর থেকে মানুষ হতে কেউ দেখে নি। তাহলে বিজ্ঞানীরা কি করে বিবর্তন সম্বন্ধে নিশ্চিত হলেন?

$
0
0

এটা ঠিক যে কেউ কোনদিন বাঁদরকে মানুষ হতে দেখে নি। এও ঠিক যে কেউ কোনদিন ডাইনোসরদের দেখেনি। তার মানে এই নয় যে ডাইনোসররা ছিল না। আমরা ফসিল বা জীবাশ্ম থেকে জানতে পারি ডাইনোসরদের কথা। তেমনই ফসিল থেকে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসও জানা যায়। আফ্রিকার তানজানিয়ার লেটলি (Laetoli)-তে পাওয়া পায়ের ছাপ থেকে আমরা জেনেছি যে ৩৫ লাখ বছর আগে সেখানে দু’পেয়ে মানুষ বা মানুষের মত কোন জীব হেঁটে গেছে (দু’জন)। যে পলিস্তরে (sediment layer) এই পায়ের ছাপ পাওয়া গেছে, সেই স্তরেই পাওয়া গেছে অস্ট্রালোপিথেকাস অ্যাফারেনসিস (Australopithecus afarensis)-দের জীবাশ্ম। দুয়ে দুয়ে চার করলেই বলা যায় যে অস্ট্রালোপিথেকাসরা দু পায়ে হাঁটতে পারত। একটা প্রজাতির বিবর্তনের ইতিহাস বোঝা অনেকটা গোয়েন্দা গল্পের মত। এক একটা সংকেত বা ক্লু এক একটা নতুন তথ্যকে সামনে নিয়ে আসে। কিছু তথ্য এক হলে একটা ছবি ফুটে ওঠে।

বিজ্ঞান যখন বলে যে মানুষ এসেছে বাঁদর থেকে, তার মানে এই নয় যে একদিন হঠাৎ কোন বাঁদর মানুষ হয়ে গেছে। এর অর্থ হল যে বাঁদর জাতীয় কোন প্রাণী বিবর্তিত হতে হতে মানুষের মত হয়েছে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে। প্রকৃতিতে বৈচিত্র থাকে সবসময় – আমার বাগানের সূর্যমুখীরা সবাই সূর্যের দিকে চেয়ে থাকলেও, গাছগুলো কিছুটা হলেও আলাদা। ফুলেদের মধ্যেও তারতম্য আছে। মানুষদের মধ্যেও প্রত্যেকে আলাদা – এমনকি যমজ সন্তানদের মধ্যেও পার্থক্য থাকে, এর কারণ আমাদের জীন। এবং, তার সঙ্গে কিছুটা হলেও আমাদের পরিবেশ। প্রাকৃতিক কোন বড় পরিবর্তন ঘটলে একটা জনসংখ্যার (population) কিছু ব্যক্তি (individual) নতুন পরিবেশে সহজে মানিয়ে নিতে পারবে হয়তো তাদের কিছু বৈশিষ্টের জন্য, আবার কেউ কেউ পারবে না। এভাবেই কিছু বৈশিষ্ট্য ‘selected’ হবে, রয়ে যাবে, এবং সেই বৈশিষ্ট্যযুক্ত প্রাণীরা প্রজনন করে নিজেদের সংখ্যা বাড়াতে থাকবে। প্রাকৃতিক বাছাই (natural selection)-এর মূলে হল এই যুক্তি।

এখন জিনোমিক্সের সাহায্যে আমরা মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস অনেকটা ভালভাবে বুঝতে পেরেছি। এখন জানা যাচ্ছে যে একই সময়ে মানুষের মত অনেক প্রজাতি ছিল, এবং তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিলুপ্ত হয়েছে। এও জানা যায় যে কিছু প্রজাতির মধ্যে breeding বা মিলন হয়েছে। এর ফলে তাদের জীনের সংমিশ্রণ ঘটেছে।

মানুষের মত প্রাণীর সবথেকে পুরনো যে ফসিল পাওয়া গেছে, তার বয়স ৬০-৭০ লক্ষ বছর। নাম Sahelanthropus tchadensis। এর মস্তিষ্ক ছিল ছোট (খুলির মাপ থেকে বোঝা যায়), বাঁদরদের মত। কিন্তু এরা দু’পেয়ে, মানুষের মত। কিভাবে জানা গেল যে সাহেলানথ্রোপাস দু’পেয়ে প্রাণী ছিল? এখানেই বিজ্ঞানীদের গোয়েন্দা হতে হয়। সাহেলানথ্রোপাস-এর শুধু মাথার হাড় পাওয়া গেছে এখনো পর্যন্ত, পশ্চিম-মধ্য আফ্রিকা থেকে। এই খুলিতে ফোরামেন ম্যাগনাম বাঁদরদের তুলনায় অনেকটা নিচের দিকে। ফোরামেন ম্যাগনাম হল খুলির নিচের দিকে একটা বড় গর্ত, যেখান দিয়ে আমাদের স্পাইনাল কর্ড মস্তিষ্ক থেকে বের হয়। চার পেয়ে স্তন্যপায়ীদের খুলিতে এই গর্ত থাকে আড়াআড়িভাবে, আর মানুষদের ক্ষেত্রে থাকে খুলির নিচের দিকে। সুতরাং, শরীরের বাকি হাড়গোড় না পাওয়া গেলেও, সাহেলানথ্রোপাস যে দু-পেয়ে ছিল, সেই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

এভাবেই ফসিলের সূত্র ধরে মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসের নানান বৈশিষ্ট্য আমরা জানতে পারি। আধুনিক বিজ্ঞান সেই সঙ্গে যোগ করেছে জীনের সূত্র, যা থেকে এই ছবি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ৫০ লক্ষ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা অবশ্যই আমাদের মত কোন মানুষ দেখে নি, এবং নথিভুক্ত করেনি। কিন্তু, বিজ্ঞানীদের চোখ দিয়ে এবংযুক্তি ও তথ্যের হাত ধরে সেই ইতিহাসকে স্পষ্ট দেখতে পারি আমরা।

বিজ্ঞানবাজী-২

(বাবা – মীর, জগা – অগ্নিজিৎ, সংলাপ – সৌম্য, আবহ – সায়ক, কার্টুন – অত্রি)

প্রচ্ছদের ছবির সূত্র

The post বাঁদর থেকে মানুষ হতে কেউ দেখে নি। তাহলে বিজ্ঞানীরা কি করে বিবর্তন সম্বন্ধে নিশ্চিত হলেন? appeared first on বিজ্ঞান - বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম (An online Bengali Popular Science magazine).


Viewing all articles
Browse latest Browse all 305

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>