Quantcast
Channel: বিজ্ঞান – Bigyan
Viewing all articles
Browse latest Browse all 305

জোনাকি আলোকে (দ্বিতীয় পর্ব)

$
0
0

জোনাকির আলোর পিছনে রাসায়নিক এবং শারীরবৃত্তীয়  ক্রিয়াপদ্ধতিটি ঠিক কী ? কেনই বা জোনাকির আলো দপদপ করে জ্বলে আর নেভে?


প্রায় বছরখানেক আগেকার কোন এক সন্ধ্যেবেলার ঘটনা।  আমাদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান এন সি বি এস-এর বাইরে গান্ধী কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, আচমকা চোখে পড়লো কাছের বেশ কিছু গাছের  ঝোপে বিন্দু বিন্দু আলো ঝিক্-মিক্ করে জ্বলছে, নিভছে আর উড়ে বেড়াচ্ছে। বহু বছর বাদে নিজের চোখে জোনাকি দেখে মনটা আনন্দে ভরে গেছিল।  মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা, লোডশেডিং হলেই জোনাকি ধরে কাচের শিশিতে ভরে রাখতাম, সব কিছু ফেলে অবাক হয়ে সেই শিশিবন্দী জোনাকিদের থেকে বেরনো আলোর জ্বলা-নেভা দেখতাম। তখন জোনাকির আলো আমার কাছে রহস্যই ছিল। এসব ভাবতে ভাবতে মনে পড়ে গেল ‘বিজ্ঞান’-এ পূর্ব প্রকাশিত ‘জোনাকি আলোকে’ লেখাটার কথা [১]। লেখাটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম জোনাকির আলোর পিছনে যেমন রাসায়নিক কারণ লুকিয়ে আছে ঠিক তেমনই এর  জীববিজ্ঞানের দিকও আছে। জীববিজ্ঞানের পরিপ্রেক্ষিতে চট করে দুটো প্রশ্ন মাথায় এসে গেল। সেই নিয়েই দুই পর্বে এই লেখা। প্রশ্নগুলো হলঃ

প্রথমত, জোনাকির দেহের আলোনির্গতকারী কোষের মধ্যে ঘটা রাসায়নিক এবং শারীরবৃত্তীয়  ক্রিয়াপদ্ধতিটি ঠিক কি ?

দ্বিতীয়ত, জোনাকির বিবর্তনে এবং বংশ বিস্তারে এই আলোক সংকেতের কোন গ্রহণযোগ্য কারণ আছে কি ? জোনাকির এই বায়োলুমিনেসেন্সের (জৈবিক আলো নির্গমন) বায়োলজিকাল দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে দেখার আগে আমরা সবাই রাসায়নিক বিক্রিয়াটা আর একবার ঝালিয়ে নিই।

প্রথম পর্বঃ জোনাকির আলোর রাসায়নিক কারণ

চিত্র ১ – লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক, এ টি পি এবং অক্সিজেনের সম্মিলিত রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি অক্সিলুসিফেরিন থেকেই জোনাকির আলো বের হয়। ছবির উৎস : http://bigyan.org.in/2014/12/04/jonaki-aloke/

জোনাকির দেহের যে সমস্ত  কোষ থেকে আলো বের হয় সেগুলোকে ফটোসাইট (photocyte) বলে।  ফটোসাইটের ভিতরে লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক, এ টি পি এবং অক্সিজেনের সম্মিলিত রাসায়নিক বিক্রিয়ায়  অক্সিলুসিফেরিন তৈরি হয় আর ওই অক্সিলুসিফেরিন থেকেই আলো বের হয় (চিত্র ১)।

চকমকি জোনাকি

জোনাকির ফটোসাইটে ঘটা রাসায়নিক বিক্রিয়াটি ঠিক কি ভাবে হয় সেটা জানতে গেলে আমাদের জোনাকির দেহের যে প্রান্তভাগ থেকে আলো নির্গত হয় সেই অংশের অ্যানাটমিটা একটু জানতেই হবে। আলো নির্গতকারী এই দেহাংশের বেশ একটা মজাদার নাম রয়েছে – ফায়ারফ্লাই ল্যান্টার্ন, কখনও ছোট করে শুধু ল্যানটার্ন-ও বলা হয়।

চিত্র ২ – জোনাকির আলো নির্গতকারী দেহাংশের অ্যানাটমি

জোনাকির  আলো নির্গতকারী দেহাংশের অ্যানাটমি : জোনাকির দেহের শেষাংশটি  যদি আড়াআড়ি ভাবে কাটি তাহলে প্রস্হচ্ছেদের ছবিটা অনেকটা উপরের ছবির (চিত্র ২) মতো দেখাবে । দেহাংশের শেষভাগটির সবচেয়ে বাইরের ত্বকটি স্বচ্ছ। তার ঠিক ভিতরের ত্বকেই রয়েছে আলো নির্গতকারী কোষ বা ফটোসাইট এবং আরো ভিতরে রয়েছে ইউরিক অ্যাসিড কৃস্টালে ভরা অন্তঃত্বক। এই ফটোসাইটের ভিতরেই রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে যা হল জোনাকির আলোর মূল কারণ। রাসায়নিক বিক্রিয়ার মূল উপাদান হল লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক, এ টি পি এবং অক্সিজেন। বিক্রিয়ায় তৈরি হয় অক্সিলুসিফেরিন। এই অক্সিলুসিফেরিন থেকেই আলো বের হয়, যা ভিতরের ইউরিক অ্যাসিডের কৃস্টালের স্তর থেকে প্রতিফলিত হয়ে দেহের বাইরে বেরিয়ে আসে।

চিত্র ৩ – শ্বাসনালিকা দিয়ে ফটোসাইটে অক্সিজেনের প্রবেশ

ফটোসাইটে লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক এবং এ টি পি সব সময় মজুদ থাকে। কিন্ত বিক্রিয়াটি ঘটানোর জন্য অক্সিজেন শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রিত ভাবে সরবরাহ হয়ে থাকে কোষের বিশেষ অংশের মধ্যে। মূল শ্বাসনালি থেকে শ্বাসনালিকার মাধ্যমে কোষের ভিতরে ঢোকা  অক্সিজেন (চিত্র ৩) নির্দিষ্ট সময়ের ছন্দে বাকি তিনটি রাসায়নিক পদার্থের সাথে বিক্রিয়া করে আর সেই জন্যেই আলোর নির্গমন ছন্দোবদ্ধ। তাই যদি না হত তবে আমরা শুধু স্থির আলো দেখতে পেতাম।

[Pullquote: জোনাকির আলোক নির্গমনের বার্তা আসে স্নায়ুতন্ত্র থেকে]

এই আলোক নির্গমনের বার্তা আসে স্নায়ুতন্ত্র থেকে। জোনাকির আলো জ্বলা বা নেভা নিয়ন্ত্রিত হয় তার স্নায়ুতন্ত্র থেকে আসা ছন্দোময় রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে। স্নায়ুপ্রান্ত থেকে নির্দিষ্ট ছন্দে ক্ষরিত হয় অক্টোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার, যা ধাপে ধাপে  অনেকগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন করে নাইট্রিক অক্সাইড [৪]। জোনাকি যখন আলো ছাড়বে মনে করে তখন নির্দিষ্ট কিছু স্নায়ুপ্রান্ত থেকে  (ফটোসাইট সংলগ্ন নিউরোন) অক্টোপামিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার ক্ষরিত হয়। অক্টোপামিন বিশেষ কিছু কোষের মধ্যে অনেক ধাপ বিশিষ্ট বেশ কিছু জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে নির্দেশ দেয়। ওই সব রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহের মধ্যে উৎপাদিত অন্যতম  রাসায়নিক পদার্থ হ’ল নাইট্রিক অক্সাইড সিন্থেজ (NOS)।  নাইট্রিক অক্সাইড সিন্থেজ কোষের মধ্যে এক বিশেষ রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে   নাইট্রিক অক্সাইড (NO) উৎপন্ন করে, যা পরিবাহিত হয়ে আসে শ্বাসনালিকার মধ্যে দিয়ে ফটোসাইটে, আর তার ফলে ফটোসাইটে মাইটোকন্ড্রিয়াগুলি অক্সিজেন গ্রহণে অক্ষম হয় এবং  শ্বাসনালিকা থেকে অনেক দূরে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে ক্ষণিকের জন্য রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য অক্সিজেনের ঘাটতি মিটে যায় এবং  লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক ও এ টি পি-র সাথে বিক্রিয়ার ফলে আলো বের হয় [২,৩]।  মেকানিজমটা আরো গভীরে গিয়ে বুঝতে উৎসাহী পাঠককে চতুর্থ রেফারেন্স আর্টিকলটি পড়ার জন্য অনুরোধ করবো [৪]।

চিত্র ৪ – কোষে নাইট্রিক অ্যাসিডের উপস্থিতি জোনাকির আলো উৎপন্ন করার জন্য আবশ্যিক।

আরেকটু পরিষ্কার করে উপরের ছবি (চিত্র ৪) দেখে বোঝা যাক। নাইট্রিক অক্সাইডের অনুপস্থিতিতে কোষের মধ্যে উপস্থিত মাইটোকন্ড্রিয়া শ্বাসনালিকার চারপাশে জড়ো হয়ে থাকে আর সমস্ত পরিবাহিত অক্সিজেন মাইটোকন্ড্রিয়া শুষে নেয় বলে লুসিফেরিন, লুসিফারেজ উৎসেচক, এ টি পি-র সাথে অক্সিজেনের বিক্রিয়া হয় না, তাই কোন আলো উৎপন্ন হয় না। নাইট্রিক অক্সাইডের উপস্থিতিতেই আলো উৎপন্ন হয়, আর তাই আমরা জোনাকির আলো হিসাবে দেখি।

পরের পর্বে দ্বিতীয় প্রশ্নের, অর্থাৎ বিবর্তনে জোনাকির আলোর ভূমিকা আছে কিনা, তার উত্তর দেব।

প্রচ্ছদের ছবির উৎস: http://blog.arkive.org/tag/adaptation/

বিশদে জানতে :

[১] জোনাকি আলোকে

[২] Nitric oxide and Firefly Flashing

[৩] Nitric Oxide and the Control of Firefly Flashing

[৪] Role of Nitric Oxide and Mitochondria in Control of Firefly Flash

The post জোনাকি আলোকে (দ্বিতীয় পর্ব) appeared first on বিজ্ঞান - বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের এক বৈদ্যুতিন মাধ্যম (An online Bengali Popular Science magazine).


Viewing all articles
Browse latest Browse all 305

Trending Articles



<script src="https://jsc.adskeeper.com/r/s/rssing.com.1596347.js" async> </script>